গ্যালিলিও গ্যালিলি (ইতালীয় উচ্চারণ: জন্ম: ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৫৬৪ - মৃত্যু: এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এরিস্টটলীয় ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর আবিষ্কারগুলোই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
৮ জানুয়ারি, ১৬৪২)একজন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক যিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সাথে বেশ নিগূঢ়ভাবে সম্পৃক্ত। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের
উন্নতি সাধন যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে,
বিভিন্ন ধরণের অনেক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, নিউটনের গতির প্রথম এবং
দ্বিতীয় সূত্র, এবং কোপারনিকাসের মতবাদের পক্ষে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের
মতে আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এতো বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর
চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেনি। তাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের
জনক, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক
অবদান
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের আবিস্কার
১৬০৯ সালে গ্যালিলিও স্বাধীনভাবে এবং উন্নত ধরনের দূরবীক্ষণ যন্ত্র
নির্মাণ ও এই যন্ত্রকে জ্যোতির্বিদ্যায় সার্থকভাবে প্রয়োগের করেন। এর আগে
১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা লিপেরশাইম তার নির্মিত এক
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কথা প্রকাশ করেন এবং সেই বছরেই এই অদ্ভুত কাচ নির্মিত
যন্ত্রের কথা গ্যালিলিওর নিকট পৌঁছে। এসময় তিনি তার এক রচনায় লিখেন:
“প্রায় ১০ মাস পূর্বে আমার কাছে সংবাদ পৌঁছে যে জনৈক ওলন্দাজ চশমা
নির্মাতা এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যার দ্বারা দূরবর্তী বস্তুদের
নিকটবর্তী বস্তুর মতো স্পষ্ট দেখা যায়। এ খবর পাওয়া মাত্র আমি নিজে
কিভাবে এরূপ একটি যন্ত্র নির্মাণ করতে পারি তা চিন্তা করতে লাগলাম।” শীঘ্রই
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের নানা উন্নতি সাধন করে গ্যালিলিও দূরবর্তী বস্তুদের
অন্তত ৩০ গুণ বড় করে দেখার ব্যবস্থা করেন।
চাঁদের কলঙ্কের কারণ আবিস্কার
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে জ্যোতিষ্কদের প্রথম পর্যবেক্ষণের ফল ‘সাইডরিয়াস নানসিয়াস’ বা ‘নক্ষত্র থেকে সংবাদবাহক’ গ্রন্থে লিপিবব্ধ হয় (প্রকাশকাল ১৬১০
খ্রীষ্টাব্দ)। চাঁদের পৃষ্ঠের খাদ, ছোট-বড় অনেক দাগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে
এই গ্রন্থে আলোচিত হয়। ভূপৃষ্ঠের ন্যায় চাঁদের উপরিভাগে যে পাহাড়,
পর্বত, উপত্যকা, নদী, গহ্বর, জলাশয় প্রভৃতির দ্বারা গঠিত গ্যালিলিও এইরূপ
অভিমত ব্যক্ত করেন। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে বড় বড় কাল দাগ দেখে তিনি তাদের সমুদ্র মনে করেছিলেন, পরে অবশ্য এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।
ছায়াপথ, বিষমতারা, নক্ষত্রপুঞ্জ, নীহারিকা
খালি চোখে অদৃশ্য অসংখ্য নক্ষত্রের অস্তিত্ব দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে। সে সময় খালি চোখে কৃত্তিকা
তারামণ্ডলে মাত্র ৬টি নক্ষত্র দেখা যেত; কিন্তু গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ
যন্ত্রের দ্বারা ৩৬টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। সে সময়ের রহস্যময় ছায়াপথ
মিল্কিওয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখান যে, তা আসলে অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি।
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তিনি বিষমতারা, নক্ষত্রপুঞ্জ এবং কয়েকটি নীহারিকাও আবিষ্কার করেছিলেন।
বৃহষ্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার
দূরবীক্ষণ
যন্ত্রের সাহায্যে গ্যালিলিও প্রথম পর্যায়ের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে
বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পরপর কয়েক রাত
বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ খুঁজে পান। বৃহস্পতির
উপগ্রহের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, ‘গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি
জ্যোতিষ্করা একমাত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে’, প্রাচীন
জ্যোতির্বিদদের এই মতবাদ সত্য নয়।
শনির বলয়
১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের শেষভাগে পাদুয়া পরিত্যাগের কিছু পূর্বে গ্যালিলিও শনির বলয় আবিষ্কার করেন।
সৌর কলঙ্ক
১৬১০
খ্রীষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে গ্যালিলিও সর্বপ্রথম সূর্যে
কতগুলো কালো দাগ পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু ১৬১২ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসের
পূর্বে তিনি এ আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করেন নি। ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের
বিজ্ঞানী টমাস হ্যারিয়ট, হল্যান্ডের জন ফ্যাব্রিসিয়াস ও জার্মানীতে শাইনার স্বাধীনভাবে সৌরকলঙ্ক
পর্যবেক্ষণ করেন, এবং তাদের আবিষ্কারের কথা গ্যালিলিওর আগেই প্রকাশিত হয়।
সেই জন্য সৌরকলঙ্ক আবিষ্কারের কৃতিত্ব হ্যারিয়ট, ফ্যাব্রিসিয়াস, শাইনার ও
গ্যালিলিও প্রত্যেকেরই আংশিকভাবে প্রাপ্য।
0 comments:
Post a Comment