Wednesday, June 7, 2017

আইজাক নিউটন

স্যার আইজ্যাক নিউটন (ইংরেজি : Sir Isaac Newton) (জন্ম : জানুয়ারি ৪, ১৬৪৩ – মৃত্যু : মার্চ ৩১, ১৭২৭)
Image result for স্যার আইজ্যাক নিউটন প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দার্শনিক এবং আলকেমিস্ট। অনেকের মতে, নিউটন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। ১৬৮৭ সনে তার বিশ্ব নন্দিত গ্রন্থ ফিলসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা প্রকাশিত হয় যাতে তিনি সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র বিধৃত করেছিলেন। এই সূত্র ও মৌল নীতিগুলোই চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে, আর তার গবেষণার ফলে উদ্ভূত এই চিরায়ত বলবিজ্ঞান পরবর্তী তিন শতক জুড়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার জগৎে একক আধিপত্য করেছে। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সকল বস্তু একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কেপলারের গ্রহীয় গতির সূত্রের সাথে নিজের মহাকর্ষ তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর গবেষণার ফলেই সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের ধারণার পেছনে সামান্যতম সন্দেহও দূরীভূত হয় বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়।
বলবিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি রচনা করেছেন নিউটন। রৈখিক এবং কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রের মাধ্যমে তিনি এই ভিত্তি রচনা করেন। আলোকবিজ্ঞানের কথায় আসলে তার হাতে তৈরি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কথা এসে যায়। একই সাথে তিনি আলোর বর্ণের উপরএকটি তত্ত্ব দাড় করান যা একটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন। পর্যবেক্ষণটি ছিল ত্রিভুজাকার প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়া আলোর বিক্ষেপণের উপর যার মাধ্যমে দৃশ্যমান বর্ণালির সৃষ্টি হয়েছিল। শব্দের দ্রুতি এবং শীতলীকরণ প্রক্রিয়া বিষয়েও তিনি গবেষণা পরিচালনা করেন যা থেকে নিউটনের শীতলীকরণ সূত্র এসেছে।
গণিতের জগৎেও নিউটনের জুড়ি মেলা ভার। নিউটন এবং লাইবনিজ যৌথভাবে ক্যালকুলাস নামে গণিতের একটি নতুন শাখার পত্তন ঘটান। এই নতুন শাখাটিই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জগৎে বিপ্লব সাধনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া নিউটন সাধারণীকৃত দ্বিপদী উপপাদ্য প্রদর্শন করেন, একটি ফাংশনের শূন্যগুলোর আপাতকরণের জন্য তথাকথিত নিউটনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং পাওয়ার সিরিজের অধ্যয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
২০০৫ সনে রয়েল সোসাইটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে কার প্রভাব সবচেয়ে বেশি এ প্রশ্ন নিয়ে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করে। ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, এক্ষেত্রে নিউটন আইনস্টাইনের চেয়েও অধিক প্রভাবশালী।

প্রাথমিক জীবন 

নিউটনের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় বাড়ির পাশের এক ক্ষুদ্রায়তন স্কুলে। ১২ বছর বয়সে তাকে গ্রান্থামের ব্যাকরণ স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি এক ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার বাড়িতে থাকতেন। এই স্কুলে নিউটন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্ব্বি যা থেকে তার মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রথমদিকে তার সাথে কেউ না পারলেও এক সময়
Image result for স্যার আইজ্যাক নিউটন
আরেকটি ছেলে তার সাথে ভালো প্রতিযোগিতা করতে সমর্থ হয়েছিল। স্কুল জীবনের প্রথম থেকেই নিউটনের সবচেয়ে বেশি ঝোঁক ছিল বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তৈরির প্রতি। সেই বয়সেই তিনি উইন্ডমিল, জল-ঘড়ি, ঘুড়ি এবং সান-ডায়াল তৈরি করেছিলেন। এছাড়া তার গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ ছিল একটি চার চাকার বাহন যা আরোহী নিজেই টেনে চালাতে পারতেন। ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে নিউটনের সৎ বাবা মারা যান। এরপর তার মা উল্‌সথর্পে ফিরে এসে তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল বাড়িতে ক্ষেত-খামারের কাজ শিখিয়ে ভবিষ্যতের বন্দোবস্ত করে দেওয়া। কিন্তু সত্বরই তিনি বুঝতে পারেন যে, খামারের কাজের দিকে নিউটনের কোনো ঝোঁক নেই। নিউটনের কাকা ছিলেন বার্টন কগলিসের রেক্টর। এই চাচার উপদেশ শুনেই পরিবার থেকে তাকে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়।

নিউটনের আপেল

Image result for স্যার আইজ্যাক নিউটন
গাছ থেকে একটি আপেলতে পড়তে দেখে নিউটন প্রথম সর্বজনীন মহাকর্ষ বলের সূত্র নিয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বলে একটি বিখ্যাত গল্প প্রচলিত রয়েছে। কার্টুনের মাধ্যমে আরও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, আপেলটি আসলে নিউটনের
মাথায় আঘাত করেছিল এবং এ কারণেই মহাকর্ষের বুদ্ধিটি তার মাথায় খেলে যায়। নিউটনের ভাইয়ের মেয়ের স্বামী এবং রয়েল মিন্টে তার সহকারী জন কন্ডুইট নিউটনের জীবনী লিখতে গিয়ে এই ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে:১৬৬৬ সনে নিউটন কেসব্রিজ ছেড়ে লিংকনশায়ারে তার মা'র কাছে চলে আসেন। সেখানকার বাগানে বসে একদিন তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। এমন সময় তার মাথায় আসে অভিকর্ষ শক্তি (যা একটি আপেলকে গাছ থেকে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসে) পৃথিবী থেকে কেবল একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারেনা। সাধারণত যেমনটা চিন্তা করা হয় এই শক্তি নিশ্চয়ই তার থেকে অনেক দূরত্ব পর্যন্ত তার শক্তি বজায় রাখে। নিজের মনে তিনি বলে যেতে থাকেন, এই বলটি কেনইবা চাঁদ পর্যন্ত প্রসারিত হবেনা। আর সেক্ষেত্রে এটি চাঁদের গতিকে প্রভাবান্বিত করে এবং সম্ভবত তাকে কক্ষপথে স্থান করে দেয়ে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি হিসাব করতে বসে যান যে, এই ধারণার ফলাফল কি হতে পারে।
প্রশ্ন এটি ছিলনা যে, অভিকর্ষ বল আদৌ আছে কি-না। বরং প্রশ্ন ছিল এই বলটি এতো দূরত্ব পর্যন্ত আপন প্রভাব প্রসারিত করতে পারে কি-না যাতে এমনকি চন্দ্রের উপরও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়। নিউটন দেখান যে, এই বলটি যদি দূরত্বের বিপরীত বর্গীয় সূত্রাণুসারে কমতে থাকে তাহলে চাঁদের কক্ষীয় পর্যায়ের যে মান পাওয়া যায় তা সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি ধারণা করেন এই একই বল অন্যান্য সকল কক্ষীয় গতির জন্য দায়ী। আর তাই এর নাম দেন "সর্বজনীন মহাকর্ষ"।
উইলিয়াম স্টাকলি নামক অপর একজন সমসাময়িক লেখক তার "মেময়ের্‌স অফ স্যার আইজাক নিউটন্‌স লাইফ" নামক গ্রন্থে ১৭২৬ সনের এপ্রিল ১৫ তারিখে কেনিংস্টনে নিউটনের সাথে তার একটি বাক্যালাপের বর্ণনা দেন। এই বাক্যালাপের এক পর্যায়ে নিউটন বলেন যে, "মহাকর্ষ নিয়ে তিনি আগে থেকেই চিন্তিত ছিলেন। এমন সময় বাগানে গবেষণার মুড নিয়ে বসে থাকার সময় গাছ থেকে একটি আপেল মাটিতে পতিত হয়। আপেলটি কেন সব সময় অভিলম্ব বরাবর মাটির দিকে পতিত হয়, তিনি নিজের মনে চিন্তা করেন। কেন পাশে বা উপর দিকে যায়না, সবসময়ই কেন পৃথিবীর কেন্দ্রের দিক বরাবর পতিত হয়।" একই ধরনের বাক্যের সমাবেশে ভলতেয়ার তার "এসে অন এপিক পোয়েট্রি" (১৭২৭) নামক প্রবন্ধে লিখেছেন "আইজাক নিউটন যখন তার বাগানে হাটছিলেন. তখন গাছ থেকে একটি আপেলকে মাটিতে পড়তে দেখে প্রথম মহাকর্ষ পদ্ধতি সম্বন্ধে তার বোধদয় হয়।" এই বর্ণনাগুলো সম্ভবত কিছুটা অতিরঞ্জিত। কারণ নিউটনের নিজের বর্ণনা অণুযায়ী, তিনি উল্‌সথর্প ম্যানরে তার নিহের বাসার জানালার কাছে বসে ছিলেন। এমন সময় জানালা দিয়ে গাছ থেকে একটি আপেল মাটিতে পড়তে দেখেন।
নিউটন যে গাছটির কথা বলেছেন তা চিহ্নিত করতে গিয়ে অনেকগুলো গাছকেই নির্বাচিত করা হয়েছে। গ্রান্থামের কিংস স্কুলের দাবী অণুসারে গাছটি স্কুল কর্তপক্ষ কিনে নিয়েছিল। কিনে নেয়ার পর গাছটি উপড়িয়ে ফেলে প্রধান শিক্ষকের বাগানে পুনরায় লাগানো হয়। বর্তমানে উল্‌সথর্প ম্যানরের দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল ট্রাস্ট এই দাবী মেনে নেয়নি। তাদের মতে ম্যানরের বাগানেই গাছটি রয়েছে। এই গাছের একটি বংশধর কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের প্রধান ফটকের পাশে বেড়ে উঠতে দেখা যায়। নিউটন ট্রিনিটি কলেজে অধ্যয়নকালে যে কক্ষে থাকতেন তার ঠিক নিচেই গাছটি অবস্থিত।

0 comments:

Post a Comment